রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

বরিশালে জেলা চেয়ারম্যানের দৌড়ে ৩৯ আ.লীগ নেতা

বরিশালে জেলা চেয়ারম্যানের দৌড়ে ৩৯ আ.লীগ নেতা

স্বদেশ ডেস্ক:

বরিশালের ৬ জেলায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন ৩৯ আওয়ামী লীগ নেতা। তাদের মধ্যে যেমন আছেন পরিষদগুলোর বর্তমান প্রশাসক তেমনি আছেন সাবেক সংসদ-সদস্য, পৌরমেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা। চেয়ারম্যান ও প্রশাসক হিসাবে টানা ৩-৪ বার দায়িত্বে থাকা নেতারাও আবার চাইছেন চেয়ারম্যান হতে। যদিও এবার ভিন্ন দাবি তুলেছেন নেতাকর্মীরা। অধিকাংশরা চাইছেন বঞ্চিত নেতারা দলীয় মনোনয়ন পাক। এ ক্ষেত্রে সাবেক সংসদ-সদস্য, জেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বাদ দেয়ারও দাবি তাদের। এদিকে, শনিবার সমাবেশ করেছেন পিরোজপুরের জেলা পরিষদ ভোটাররা। ৭৪৭ ভোটারের ৬৮০ জন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক মহিউদ্দিন মহারাজকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদে প্রথমে প্রশাসক নিয়োগ হয় জেলা পরিষদে। পরে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন চেয়ারম্যান। বিধান অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, পৌরমেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যন ও ভাইস চেয়ারম্যানরা ভোট দেন এ নির্বাচনে। জেলা পরিষদে সর্বশেষ চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৭ এপ্রিল। তাদেরই আবার অন্তর্বর্তীকালের জন্য প্রশাসকের দায়িত্ব দেয় সরকার। ৩১ আগস্ট জেলা পরিষদের নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী এ মাসের ১৭ তারিখ নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। ভোটাররাও প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন মানেই নিশ্চিত বিজয়। এ সম্ভাবনায় বরিশালের ছয় জেলায় এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতা নেমেছেন দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে।

এ দৌড়ে আছেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান আলতাফ হোসেন ভুলু ও বর্তমান প্রশাসক সাবেক সংসদ-সদস্য মাইদুল ইসলাম। আরও চারজনের নাম রয়েছে মনোনয়ন প্রার্থীর আলোচনায়। যদিও তারা মুখ ফুটে বলছেন না কিছুই। একাধিক সূত্র জানায়, তারা অপেক্ষায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি,পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নসংক্রান্ত পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক সংসদ-সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সিদ্ধান্তের। তিনি যাকে বলবেন তিনিই কিনবেন দলীয় মনোনয়নের আবেদন। আলোচ্য এ চারজন হলেন সাবেক সংসদ-সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, চেম্বার সভাপতি ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম। বিষয়টি সম্পর্কে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে দলের মনোনয়ন বোর্ড। শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই হবেন দলীয় প্রার্থী।

বরিশালের মতোই পরিস্থিতি ভোলা ও ঝালকাঠিতে। কেন্দ্রীয় নেতা সংসদ-সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও আমীর হোসেন আমুর দিকে তাকিয়ে আছেন এ দুই জেলার মনোনয়ন প্রার্থীরা। ভোলায় বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক আব্দুল মোমিন টুলু ছাড়াও দলীয় মনোনয়নের আশায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হামিদুল হক বাহালুল। তাদের মধ্যে প্রশাসক ও চেয়ারম্যান মিলিয়ে টানা চার মেয়াদ দায়িত্বে আছেন মোমিন। ঝালকাঠিতে মনোনয়ন চাইছেন হাফ ডজন নেতা। তারা হলেন চার মেয়াদ দায়িত্বে থাকা বর্তমান প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরদার শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য ফয়জুর রব আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিকে মোস্তাফিজুর রহমান এবং সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য জেলার আরেক সহসভাপতি সালাউদ্দিন আহম্মেদ সালেক। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, সবার আগে জরুরি বঞ্চিত নেতাদের মূল্যায়ন। যারা কোনো না কোনো সময় সংসদ-সদস্য, চেয়ারম্যান কিংবা প্রশাসক ছিলেন তারা কেউ এখন আর সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। এ ক্ষেত্রে ‘ক্লিন ইমেজে’র কেউ মনোনয়ন পেলে কোনো বিতর্ক থাকবে না।

নির্বাচন প্রশ্নে একের পর এক চমকের জš§ দিচ্ছেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক, সদ্য সাবেক জেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ। এ জেলায় দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী হিসাবে এখন পর্যন্ত তিনিসহ মোট ছয়জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে সর্বশেষ যে পরিস্থিতি তাতে এখানে মহারাজের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হওয়াটা বলতে গেলে প্রায় নিশ্চিত। সপ্তাহ খানেক আগে এখানকার ৭৪৭ ভোটারের ৭০৪ জনই তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠান দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। শনিবার আবার তারা সভা করেন ভাণ্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী এলাকায় হরিণপালা ইকোপার্কে। সেখানেও মহারাজকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। সভায় ৭৪৭ ভোটারের মধ্যে ৬৮০ জন উপস্থিত ছিলেন। মহারাজ ছাড়া এখানে আরও যারা দলীয় মনোনয়ন চাইছেন তারা হলেন সাবেক সংসদ-সদস্য একেএমএ আউয়ালের ভাই পিরোজপুর সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবর রহমান খালেকের স্ত্রী সালমা রহমান হ্যাপী, আউয়ালের আরেক ভাই যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর রহমান মহারাজ এবং সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহ আলম। এ ছাড়া আউয়াল ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইসাহাক আলী খান পান্নার নাম শোনা গেলেও প্রকাশ্যে তারা কিছুই বলছেন না।

পটুয়াখালীতে মনোনয়ন চাইছেন ১০ নেতা। তারা হলেন বর্তমান প্রশাসক খলিলুর রহমান মোহন, দলের জেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর, সাবেক উপজেলা ও পৌর চেয়ারম্যান সুলতান আহম্মেদ মৃধা, বর্র্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা দলের জেলা সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান, যুবলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন মিয়া, তসলিম সিকদার, জেলা সহসভাপতি আলমগীর মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মো. আলাউদ্দিন এবং জেলা সহসভাপতি অধ্যক্ষ সৈয়দ বাবুল।

বরগুনায় দলীয় মনোনয়ন চাইছেন বর্তমান প্রশাসক সাবেক সংসদ-সদস্য দেলোয়ার হোসেন, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহিদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হোসেন মৃধা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা, দল থেকে বহিষ্কৃত মোতালেব মিয়া, দুবার পৌরমেয়রের দায়িত্ব পালন করা শাহজাহান মিয়া, দলের জেলা তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মজিবুল হক কিসলু এবং হিমু মোল্লা।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, দেখা যাচ্ছে, একই ব্যক্তিরা ঘুরেফিরে বারবার সংসদ-সদস্য, মেয়র, চেয়ারম্যান হচ্ছেন। অথচ দলে এমন অনেক ত্যাগী নেতা আছেন তাদের মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। এবার বঞ্চিতদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হোক।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877